দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কোন ঘটনা নয়। ২০০৭ সনের সিডর’র ভয়াবহ স্মৃতি ও ক্ষয়ক্ষতির রেশ তখনো কাটেনি। বছর না ঘুরতেই এক রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে উপকুলের অনেক জেলা আবারও লন্ডভন্ড । মানুষ পশু সবার জীবনই ঝড়ে বৃষ্টিতে বিপন্ন। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ীর ক্ষতি হয়েছে। এই ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে সুন্দরবনের বন্য পশু পাখিও রেহায় পায়নি।
সকাল হতেই দেখা গেল, চারদিকে মানুষের দুঃখ কষ্টের নানা চিত্র। সজিব দেখতে পেল, বাড়িরপাশের গাছ গাছালির ঝোঁপে হলুদ ডোরাকাটা এক লেজ । একটু কাছে গিয়ে ভাল করে দেখে তো সে অবাক. ’এ যে রয়েল বেংগল টাইগার’। দৌড়ে এক চিৎকার দিয়ে সজিব তার বাবা কে গিয়ে খবরটা দিল। দেখা গেল সত্যিই ঝোপের মাঝে ক্লান্ত বিষন্ন এক রয়েল বেংগল টাইগার শুয়ে আছ্ েসজিবের বাড়ি বাগের হাট জেলার সরণখোলা উপজেলায়। তাই বলে সে বাঘকে কোন সময় এমন করে লোকালয়ে চলে আসতে আর দেখেনি।
এতোক্ষণে আশে পাশে জানাজানি হতে বাকি নেই। লোকজনের ভীড় জমে গেল। সবার হাতেই দেশীয় অস্ত্র, লাঠি সোটা। যেন বাঘকে মারার জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ প্রস্তুতি। কেউ কেউ সবাইকে সর্তক করছে। কখন লাফ দিয়ে কার ঘাড়ে কামড় বসায় সে ব্যাপারেই সর্তকর্তা বেশী।

বাঘ শিকারী জুলফিকে খবর দেয়া হয়েছে। সবাই তার আসা পর্যšত সাবধানে অপেক্ষা করছে। কোথাও যেন পালাতে না পারে।
আশে পাশের অনেকেই ভয়ে ঘওে ঢুকে গেছে। ছোট বাচ্চাদেরও ঘরের ভিতর নিয়ে দরজা ব›ধ করে দেয়া হয়েছে। উদ্ধসুক জনতার ভীড় ক্রমেই বাড়তে থাকলো। গ্রামে খবর ছরীয়ে পড়লো‘ বাঘাডোবা গ্রামে সরকার বাড়িতে বাঘ একজন কে কামড়িয়েছে। বাঘ এখনো ধরা পড়ে নাই’। অনেকে বাঘের খবর শুনেই ভয়ে দৌঁড়াচেছ বাড়ির দিকে। যেন বাঘ তাকেই পেছনে ধাওয়া করছে। ছোট গ্রামটিতে হুলছু’ল পড়ে গেল। এরই মধ্যে খবর এলো বাঘের বাচ্চাও দেখা গেছে বাড়ির পেছনে জংগলের আরেক ঝোঁপে।
কেউ কেউ এবার সে দিকে ছুটলো। সত্যিই দেখা গেল ঝোঁপের নিচে ছোট এক বাঘের বাচ্চা শুয়ে আছে। কেউ একজন লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেল ।‘আগে এটাকে মারো’ বলে।
ভীড়ের মাঝে লাফ দিয়ে বাঘের বাচ্চার সামনে গিয়ে পড়লো সজিব’। ‘না আমি বাচ্চাটাকে মারতে দিবনা’। সবাই অবাক ।‘ সরে যা । তোকে কমড়াবে’ বলেও ভয় দেখালো কেউ কেউ । তবুও সজিব সরলো না। কাছে গিয়ে সে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল। যেন বিড়াল ছানা । দশ বছরের সজিবের সাহস দেখে সবাইতো অবাক। সজিব বলে ‘আপনারা যান , আমি একে নিয়ে আসছি’। বাচ্চাটি সারারাত ঝড়, বৃষ্টিতে ভিজে আধামরা অবস্থা। নড়াচড়ার শক্তি নেই। শরীর ভেজা । আগে এর সেবা- শুষ্রুশা করা দরকার। সজিব এটাকে বাড়িতে লুকিয়ে নিয়ে গেল। বাঘে দেখে ফেললে বিপদ হবে তাই।
সজিব বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালো। আগুনের পাশে নিয়ে শরীর গরম করল। সজিব ভাবল ‘ হয়তো আরো বাচ্চা ছিল। সেগুলো জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। বাঘ জলোচ্ছ্বাসে ভেসে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। সজিবের মনে উপকূলীয় মানুষের প্রাকৃতিক দুযোর্গের দঃখ, কষ্ট, স্বজন হারনোর কান্না ভেসে উঠল। বিপদে পড়েই বাঘ তার বাচ্চাসহ বাঁচার জন্যই গ্রামে চলে এসেছে। বিপদে সকল প্রাণিই এক। এটা মা বাঘ , নিশ্চয় তার সংগে আরো বাচ্চা ছিল। সেগুলো হযত মারা গেছে। মানুষ ঝোঁপঝাড়ে আরো খোঁজাখুঁজি করে আর কোন বাচ্চার সন্ধান পায়নি।
মা বাঘকে মেরে ফেললে বাচ্চাটার কী হবে ? তাছাড়া বাঘ মারাতো আইনত নিষেধ। সজিব স্কুলে তা শুনেছে। এসব কথা সজিবের মনে হতেই সে আর দেরী করলো না। দৌঁড়ে বাঘ যেখানে ,সেখানে চলে আসলো। সবাইকে বললো’বাঘকে মারা যাবে না’। শুনে সবাই হতভম্ব। বলে কী এই পিচ্চি ছেলে। সে বুঝিয়ে বললো বাচ্চাটার কথা , বিপদে আশ্রয়ের কথা, বাঘ মারা নিষেধ এসব বিষয়।
সজিবেরে বাবাও একমত হলো। সবাই সিদ্ধাšত নিল এক্ষুনি বন বিভাগে খবর দিবে। মা বাঘ ও বাচ্চাকে তাদের হাতে তুলে দিবে। কারণ শিশুরা যেমন মায়ের কোলে সুন্দর ও নিরাপদ, তেমনি বন্য প্রাণিরা বনেই সুন্দর, বনেই নিরাপদ।
No comments:
Post a Comment